দুই বছর পরও ধস ঠেকাতে খুঁটিতেই ভরসা সড়ক বিভাগের!
প্রবল বর্ষণের কারণে ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে সড়কপথের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ সময় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের একটি অংশ সম্পূর্ণভাবে ধসে যায়।
জিয়াউল হক, রাঙামাটি
প্রকাশিত: ১২:৩৬, জুন ২৪, ২০১৯ | সর্বশেষ আপডেট: ১৩:১৪, জুন ২৪, ২০১৯
প্রবল বর্ষণের কারণে ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে সড়কপথের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ সময় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের একটি অংশ সম্পূর্ণভাবে ধসে যায়। এ কারণে ওই সময় টানা ১০ দিন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সাময়িকভাবে বিকল্প সড়ক ও একটি সেতু তৈরি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সে সময় গাছের বল্লি (গাছের খুঁটি) দিয়ে সড়ক সচল রাখা হয়েছিল। দুই বছর পার হয়ে গেলেও রাস্তাগুলোর সংস্কার এখনও করা হয়নি। সেই সমস্যা সমাধানে ফের গাছের খুঁটিতেই সমাধান খুঁজছে সড়ক বিভাগ।
২০১৭ সালে ভূমিধসের পর রাঙামাটির সাথে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-বান্দরবান সড়কের ১৫৩টি স্পটে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সময় যোগাযোগ সচল রাখার জন্য ১৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে খুঁটি দিয়ে সড়ক মেরামতের কাজ করা হয়।
জানা গেছে, খুঁটির মেয়াদ ছয় মাস হলেও দুই বছরেও স্থায়ীভাবে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। বেশিরভাগ খুঁটি নষ্ট হয়ে গেছে। এরই মধ্যে এ বছর বর্ষা শুরু হওয়ায় ফের সড়কগুলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম রুটে বাস ও ট্রাকচালকদের অভিযোগ, দুই বছর পরও স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বর্ষার শুরুতেই আবারও খুঁটি দিয়ে সড়ক সংস্কারের চেষ্টা করছে সড়ক বিভাগ। প্রতিদিন তারা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। একটি গাড়ি আসলে দাঁড়িয়ে অন্য গাড়িকে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হয়। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করা খুবই কঠিন।
রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মাইনুদ্দীন সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি স্থায়ীভাবে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি দুই বছর পরও খুঁটি দিয়ে সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। খুঁটি সড়ক ঠিক করা সম্ভব না, এতে আরও ঝুঁকি বাড়ে।’ তিনি দ্রুত স্থায়ীভাবে সড়ক সংস্কারের দাবি জানান।
রাঙামাটি সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সরকার সেই সময় বলেছিল এই সমস্যাটি স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করবে। আমরা জানি না প্রকল্পটি কোন পর্যায়ে আছে। এই প্রকল্পের কাজ শুরু না করায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ অস্থায়ীভাবে খুঁটি দিয়ে রাস্তাগুলো কোনও রকমে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি স্থানীয়রা যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়ছেন।’
উন্নয়ন কর্মী ললিত সি চাকমা বলেন, ‘২০১৭ ও ২০১৮ সালে পাহাড় ধসে যে পরিমাণ রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা উচ্চ মহলের সুদৃষ্টির অভাব রয়েছে। সরকারের বরাদ্দ পাওয়ার আবেদনটি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিরা উচ্চ মহলে পৌঁছে দিতে পারেনি। আমরা চাই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে সড়ককে নিরাপদ ও টেকসই হিসেবে গড়ে তুলবে সড়ক বিভাগ।’
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, সড়ক স্থায়ী মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে যে ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে দীর্ঘদিন চিঠি চালাচালির পর গত মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাস হয়েছে। প্রায় ২৫০ কেটি টাকার প্রকল্পটি এখন একনেকে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। শিগগিরিই এটি পাস হবে। এটি পাস হলে নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখন বর্ষা মৌসুম। তাই ঝুঁকিপূর্ণ কিছু এলাকায় গাছের খুঁটি দিয়ে সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে।’
Comments (0)
Facebook Comments